সম্প্রতি দামের জন্যই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠল একটি আইসক্রিমের। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই আইসক্রিমের দাম শুনলে একটু চমকে যেতে পারেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যানুসারে, এই আইসক্রিম এক পেয়ালার দাম আট লাখ ৮০ হাজার ইয়েন যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ছয় লাখ ৮২ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এটিই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামি আইসক্রিম বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সিএনএন।
জাপানি ব্র্যান্ড সেলাতো এই আইসক্রিমের বর্ণনায় তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে ‘জেলাত্তো’। ইতালীয় ভাষায় জেলাত্তো মানেও আইসক্রিম। ধরে নেওয়া যায় বিশেষ এই আইসক্রিমটি তৈরিও হয়েছে ইতালীয় কায়দাকানুন অনুসরণ করে।
আসলেই তাই! ইতালির অ্যালবা থেকে সংগ্রহ করা হয় ট্রাফল, যা আদতে বিশেষ এক রকম মাশরুম যা ফলে মাটির নিচে।
সেরা ট্রাফল ফলানোর জন্য গোটা বিশ্বে সুনাম রয়েছে এই অ্যালবা অঞ্চলের। এর দামও সেই মানের জানান দেয়। এক কেজি ভালো মানের ট্রাফলের জন্য খরচ করতে হবে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার ডলার বা সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। বিশ্বাস না হয়, খোঁজ করে দেখুন গিনেস রেকর্ডে- গেল সপ্তাহেই যোগ হয়েছে এই তথ্য।
এর ওপরে স্বর্ণের প্রলেপ থাকবে না? থাকবে তো! এডিবল বা আহারযোগ্য স্বর্ণের প্রলেপ আর তার সঙ্গে আরও কিছু উপাদান। যেমন, দুই ধরনের চিজ আর সেইসঙ্গে জাপানি সাকেকাসু। খটমটে নামের প্রথম দুই অক্ষর কী পরিচিত ঠেকে? এটি আদতে অ্যালকোহল জগতে জাপানের নিজস্ব পানীয় ‘সাকে’ তৈরির সময় উপজাত হিসাবে মেলে। দেখতে অনেকটা পেস্টের মতো।
“এটি তৈরি করতে আমাদের দেড় বছরের বেশি লেগেছে।” – গিনেস কর্তৃপক্ষকে বলেন উৎপাদক কোম্পানির এক মুখপাত্র। “বারবার চেষ্টা চালিয়ে ঠিক যে স্বাদ আমরা চেয়েছিলাম সেটায় আনা সম্ভব হয়েছে।”
কোম্পানি বলছে, স্রেফ অনেক দামি আইসক্রিম বানানো তাদের লক্ষ্য ছিল না। বরং স্বাদের জগতে এই অভিজ্ঞতা এক অ্যাডভেঞ্চার বলেই দাবি তাদের। আর সেই রোমাঞ্চঅভিযানে মিলবে ইউরোপীয় উপাদানের সঙ্গে জাপানি ঐহিহ্যগত স্বাদের সংমিশ্রন।

আর এই মিশনে কোম্পানি নিয়ে এসেছে একজন খাদ্যগুরু- ওসাকার রিভি রেস্তোরাঁর শেফ তাদাইয়োশি ইয়ামাদা। এর পেছনে কারণও আছে– ফরাসী এই রেস্তোরাঁয় তিনি ইতালীয় খাবারের সঙ্গে জাপানি স্বাদের ফিউশন ঘটিয়েছেন।
তৈরির যত কায়দাকানুন আছে, মহার্ঘ্য এই ডেসার্ট হাতে পাওয়ার পর এর স্বাদ নেওয়ার বেলাতেও বাছবিচারের ফর্দ তার চেয়ে ছোট নয়। ঠিক যখন আইসক্রিম স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নরম হয়ে আসতে শুরু করবে, তখনই ট্রাফলের টুকরা এতে দিন। এরপর হাতের চামচ দিয়ে নাড়ুন। যে সে চামচ নয়, হাতে তৈরি নকশা করা ধাতব এই চামচ আইসক্রিমের সঙ্গেই আসবে।
তারও আগে, হিমঘর থেকে বের করা আইসক্রিমকে খানিকটা সময় দিতে হবে ‘ডিফ্রস্ট’ হওয়ার জন্য। তবে সেটা মাইক্রোওয়েভ অভেনে পাঁচশ ওয়াট মানে ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড রাখলেও হবে – যদি ফ্রিজারে বেশি জমে গিয়ে থাকে।
গিনেস রেকর্ডের কর্মকর্তারা অবশ্য এই আইসক্রিমের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পাননি। সেটি পেয়েছেন কোম্পানির কর্মীরা। তারা বর্ণনায় বলেছেন, এটি স্বাদ আর অনুভুতিতে অনেক “রিচ”।
সেইসঙ্গে তাদের উপদেশ হচ্ছে, এটি হয় জপানি সাকে বা ফরাসী হোয়াইট ওয়াইনের সঙ্গে মিলিয়ে আস্বাদন করা উত্তম।
কোনো দোকানে এখনও এই আইসক্রিম পাওয়া যাবে না। খেতে চাইলে অর্ডার করতে হরে সরাসরি কোম্পানির কাছে।
কালো ট্রাফলের একটি পদও তৈরি প্রস্তুতি নিচ্ছে উৎপাদক কোম্পানি সেলাতো। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে ক্যাভিয়ার আর শ্যাম্পেনও তারা পণ্যতালিকায় যোগ করবে।